‘শুকনো জায়গা কবর দিও মাকে’ এমন মায়ের লাশ কলার ভেলায় চিরকুট লিখে ভাসিয়ে দেয় ছেলে। ঘটনাটি ঘঠেছে ঠাঙ্গুয়ার হাওরে বন্যা দুর্গত এলাকায়। আত্বীয় স্বজন তাদের লাশ কলার ভেলায় ভাসিয়ে নীরবে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছেন। এর সত্যতা নিশ্চিত করেন হাওর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি কাশমির রেজা।
এছাড়া বন্যা কবলিত জায়গায় চাঁদাবাজ ও জল দস্যু উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। নৌকার বাড়া বৃদ্ধি করে মাঝিরা এক হাজার টাকার জায়গায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায় করছে। ত্রান বিতরণসহ দাবি উঠেছে সার্বিক বিষয়ও প্রশাসনের তদারকি বৃদ্ধি করা।
রবিবার (১৯ জুন) সকালে সুনামগঞ্জ তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর এলাকায় টাঙ্গুয়ার আমরা আজহারী সাইবার টিমের একটি ত্রান সাথে হাওরে সারাদিন ঘুরে ত্রান বিতরণ ও সরজমিন চিত্র পরিদর্শণ করি। আমাদের নৌকা যখন বিশ্বম্ভরপুর হাওরে ভাতের টেক আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে একটি দৃশ্য চোখে পড়ে। আত্বীয়-স্বজন পানিতে ভাসিয়ে দিচ্ছেন তাদের স্বজনের লাশকে।
এসময় কথা ঐ এলাকার বাসিন্ধা ও হাওর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি কাশমির রেজার সাথে তিনি বলেন, হাওরে একটি অমানবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এক ইঞ্চি পরিমান শোকনো জায়গা খুজে পাওয়া কঠিন। মানুষ দাড়ানোর মতো কোন জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে এখনো ত্রান সামগ্রি পৌছেনি সেই দুর্গত এলাকায়।
বিশেষ করে খুবই দুর্গত এলাকা মধ্যে মধ্যনগর, তাহিরপুর,ধর্মপাশা, শাল্লা। ঐ এলাকায় যাতায়াত খুবই কষ্টকর তাই লোকজন ত্রান নিয়ে যেতে যাচ্ছেন না। যা কারনে ত্রান বিতরণ হচ্ছে একই এলাকায় বার।
তিনি বলেন ঘটনাটি সত্য, আমাদের হাওর এলাকায় তাহিরপুর লাশ দাফন করার মতো শুকনো জায়গা না পেয়ে বানের জলে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। লোকজনের কিছু করার নেই কোথায় এক ইঞ্চি জায়গা খালি নেই পানি উঠে নাই। তিনি আরো জানান কিছু অসৎ নৌকা মাঝিরা তারা সিন্ডিকেট করে নৌকার ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা এক হাজার টাকার জায়গায় ১০ হাজার টাকা করে নিচ্ছে।
ত্রান সামগ্রী বিতরণ পাশাপাশি নৌকার মাঝিদের নৈরাজ্য দুর করতে প্রশাসনের ও সেনা বাহিনী তদারকি যোরদার করা অবশ্যক। বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি ইকবাল হোসেন জানান, আমাদের থানা ভবনসহ সর্বত্র পানি ছিলো, থানায় এমন কোন জায়গা নেই পানি উঠে নাই। এখন ধীরে ধীরে পানি নামছে।
তবে পরিস্থিতি খুবই মারাত্মক. ভাতের টেক এলাকার আলেয়া বেগম জানান ৮দিন ধরে তারা শুকনো খাবার খেয়ে বেচেঁ আছেন। সামাজিক সংগঠন গুলো ত্রান নিয়ে পাশে দাড়ানোর জন্য মানুষের উপকৃত হয়েছে। তাদের এলাকায় সরকারী ত্রান এখনো পৌছেনি। গতকাল এক বান্ডিল মোমবাতি পেয়ে জানান ৮দিন পরে তাদের ঘরে আলো জ্বলবে। সারা হাওরাঞ্চল তীব্র অন্ধাকারে রয়েছে তাই চোরের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে।
সালামপুর গ্রামের আব্দুল করিম জানান, আমরা সারারাত ঘুমাই না। সবাই মিলে গ্রাম পাহাড়া দেই। এছাড়ও হাওরাঞ্চলে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ত্রান বিতরণ কারীরা নানান দুর্ভোগে পড়েছেন। একদিকে ত্রান বিতরনে নৌকা নিতে হলে মাঝিরা ১ হাজার টাকার ভাড়া ১০/১৫ হাজার টাকা নিচ্ছে। আবার ত্রান বিতরণে গিয়ে দস্যুদের কবলে পড়তে হচ্ছে। গতকাল মিশর আল আজহার বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি সৈয়দ হাসান আল আজহারী ও তার সাইবার টিম প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ত্রাণ সামগ্রি নিয়ে তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর হাওরে ত্রান বিতরন করেন।
ত্রান সামগ্রি বিতরণ করে আসার পথে রাতে বিশ্বম্ভরপুর হাওরের সালামপুরে ইমদাদুল হক মিলন নামে এক দস্যূর নেতৃত্বে নৌকায় আক্রমণ করে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং তাকে ১০০ প্যাকেট ত্রান সামগ্রি দাবি জানান। পরে তাকে নগদ ৪ হাজার টাকা দিয়ে নৌকা যাত্রিরা রক্ষা পান। এ ব্যাপারে মোবাইলে যোগাযোগ করলে বলেন, আমার এলাকায় তাদেরকে ত্রান বিতরণের কথা থাকলেও তারা ত্রান বিতরণ করেনি। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে জনসাধারণ তাদের কে ধাওয়া করেছে। আমি সার্ভিস চার্জ বাবদ ৪ হাজার টাকা নিয়েছিলাম।