ফুটবল খেলার সময় আঘাত লেগে খাদ্যনালি ছিঁড়ে নাহিদুল ইসলাম রানা (২২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার উত্তর লঙ্কাচরে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে থাকা অবস্থায় মারা যায় তিনি।
ফুটবল মাঠে খেলা চলাকালীন গত ১০ জুন সে আহত হয়। লোহাগড়া উপজেলার উত্তর পাঙ্খাচরের রিকশাচালক নাসির হোসেন মোল্লার বড় ছেলে নাহিদুল ইসলাম রানা। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন।
জানা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার সরকারি এস কে কলেজের বাংলা বিভাগের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল নাহিদুল ইসলাম। টিউশন করতেন পড়াশোনার পাশাপাশি। এমনকি পরের জমিতে কাজ করতেন, কখনোবা রাজমিস্ত্রির কাজ করে রিকশাচালক বাবার সংসারে অর্থের যোগান দিতেন। নিজের পড়াশোনা ও সংসারের খরচ যোগান দেওয়ার পাশাপাশি নাহিদুল ইসলাম ছোট চার ভাই-বোনের পড়াশোনারও দেখভাল করতেন। এমনকি বেশ পারদর্শী ছিলেন খেলাধুলায়। আশপাশের গ্রামে কোথাও খেলা চললে ভালো পরিমাণ টাকার বিনিময়ে তিনি খেলতেন।
এদিকে বাবা-মা আজ বাকরুদ্ধ একমাত্র সম্বল হারিয়ে। মায়ের বিলাপ যেন থামছেই না ছোট ছেলেকে বুকে জড়িয়ে। বিলাপ করতে করতে নাহিদুলের মা বলেন, ওরে আল্লাহ রে শুক্কুরবারের দিন আমার তিনডে ছাওয়াল এক সাথে নামাজ পড়ছে মসজিদে। আমি কইছি নামাজ কালাম পইড়ে আসো। আমি ভাত দিচ্ছি। ছাওয়াল কাঁঠাল আনছে আমার জন্যি। ওহ আব্বা, তোমাগে তোমার ভাই আর মারবে নানে।
নাহিদুলের ফুফু আঙ্গুর বেগম বলেন, এদের কোন জমানো টাকা পয়সা নাই, মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে, বাবা রিকশা ভ্যান চালায়। তাদের নিজস্ব কোন জায়গা জমি নেই। অন্যের জমিতে ঘর করে বসবাস করছে। রানার মতো এমন ভালো ছেলে দুনিয়ায় আর একটাও নাই। বাবা আমার বল খেলতে যাইয়া আজ দুনিয়া থেকে চলে গেলে।
লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর আলী গণমাধ্যমকে বলেন, আমি অত্যন্ত ব্যাথিত নাহিদুলে ব্যাপারে আপনাদের থেকে জেনে। আমি শুনেছি ছেলেটা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় ভালো ছিল।
ফুটবল খেলতে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত তার অকাল মৃত্যু হয়েছে, যা খুবই দুঃখজনক।