বিয়ে কর, যদি তোমার ভাগ্যে ভালো বউ জোটে, তুমি সুখী, আর যদি খারাপ জোটে, তুমি হয়ে যাবে দার্শনিক: সক্রেটিস

লেখক: আহাদুল ইসলাম বিয়ে নিয়ে রয়েছে যুক্তি-তর্ক ও পক্ষ-বিপক্ষ। কেউ বিয়ে করে হয়ে যান কবি, আবার কেউ হয়ে যান ব্রহ্মচারী। এমনকি বিয়ে নিয়ে রয়েছে ‘দিল্লি কা লাড্ডু’। যে করল সেও পস্তাল, আর যে করল না সেও পস্তাল। তবে, বিয়ে নিয়ে দার্শনিকরা কী বলছেন? কিংবা দর্শন শেখানো মহা পণ্ডিতরা নিজে বিয়ে করেছেন তো? করলে বিয়ে করার পর তাদের বক্তব্য কি? ভালো না খারাপ? তাদের বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিয়ে করা যাবে? এতো সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যেতে হবে গ্রীসে। কারণ- দার্শনিকদের তীর্থ স্থান ধরা হয় প্রাচীন গ্রীস। এখানেই ছিলেন তিন মহান দার্শনিক; সক্রেটিস-প্লেটো-এরিস্টটল।

আরও পড়ুনঃ ইসলামি শিক্ষা বিস্তারের প্রধান কেন্দ্র ছিল এই মসজিদ

প্রথমেই বলে নেয়া ভালো যে, দার্শনিকদের কথা মাথায় এলে অনেকের মাথা এই গরম আবহাওয়ায় আরও গরম হয়ে যায়! আর হবেই না কেন দর্শনকে প্রাচীনতম একাডেমিক শৃঙ্খলা হিসাবে বিবেচনা করা। তবে, দর্শন খুবই অদ্ভুত। সেই সাথে মজার। এই ধরুণ, কি প্রমাণ আছে যে, এই লেখা যিনি লিখছেন, তিনি বাস্তবে আসলেই লিখছেন, হতে পারে তিনি এখানে নেই। আছেন কল্পনায়!

যাক! বিয়েতে ফিরে আসা যাক। তিন মহান দার্শনিকদের মধ্যে বিয়ে করেছেন সক্রেটিস ও এরিস্টটল। প্লেটো ছিলেন সক্রেটিসের শিষ্য। তিনি গুরুকে অনুসরণ করেছেন জীবনের সব জায়গায়; শুধু বিয়ের ব্যাপারে গুরুকে ওভারটেক করেছেন। মানে বিয়ে করেননি। আর অ্যারিস্টটল বিয়ে করেছেন একবারই।

তবে সক্রেটিস নামের ভদ্রলোক ‘দিল্লি কা লাড্ডু’ খেয়েছেন মানে বিয়ে করেছেন ২বার। তাই, বিয়ের বিষয়ে গুরুর অভিজ্ঞতাও সবার থেকে বেশিই হবে, তাই স্বাভাবিক। জ্যানথিপের সাথে তার বিয়ে হয়েছিল যখন সক্রেটিসের বয়স পঞ্চাশে এবং আরেকটি বিয়ে হয়েছিল অ্যারিস্টিডেসের মেয়ের সাথে যার নাম মিরটো।

সক্রেটিসের প্রথম বউ জ্যানথিপি বা জানথিপি। জানথিপি অর্থ হলুদ ঘোড়া। সক্রেটিস সম্পর্কে জানার উৎস মূলত তিনটি। তার শিষ্য প্লেটো ও জেনোফ্যানের লেখা। সেই সাথে, বিরোধী এরিস্টোফ্যানিসের লেখা ব্যঙ্গাত্বক নাটক ক্লাউডস।

প্লেটো ছিলেন সক্রেটিসের যোগ্য শিষ্য। তিনি কাব্যিক ভঙ্গিমায় কথোপকথন আকারে সক্রেটিসের বক্তব্য লিখে গেছেন। এগুলোর সবই সক্রেটিসের বক্তব্য নাও হতে পারে। সক্রেটিস নিজে কিছু লিখে যান নি। সক্রেটিসের পদ্বতি জ্ঞাণ বিলানো ছিল না। তিনি শুধু প্রশ্ন করে যেতেন। যেটাকে জার্মান চিত্র পরিচালক মিখায়েল হানেকে বলেন একজন আর্টিস্টের মূল কাজ- প্রশ্ন করে যাওয়া, উত্তর দেয়া নয়।

সক্রেটিসের বউ জানথিপির কথা আছে প্লেটোর বইয়ে। সেখানে তিনি জানথিপিকে বলেছেন স্বামীর অনুগত স্ত্রী এবং সন্তানদের একজন ভালো মা হিসেবে। তবে, এইলিয়ান নামের একজন রোমান লেখক জানথিপিকে হিংসুটে মহিলা হিসেবে চিত্রায়িত করেছেন।

তার চরিত্র ভয়ংকর এবং এমনভাবে তাকে তুলে ধরা হয় যেন তিনি নিয়মিত সক্রেটিসকে ঝাড়ুপেটা করতেন। সেই সময়ে, মানুষ এই ব্যাপারটা আবার উপভোগ করে।

শোনা যায়, ভারি কলহপ্রিয়া ছিলেন জ্যানথিপি। চিৎকার চেঁচামেচিতে বাড়িতে কাক চিল বসত না। আর সক্রেটিস? বিয়ে নিয়ে সক্রেটিসের মনোভাব ছিল ভারি মজার। বউয়ের তর্জনগর্জনকে মোটেই পাত্তা দিতেন না তিনি। নিজের ভাবনা আর আড্ডা নিয়েই মশগুল থাকতেন। আর বলে বেড়াতেন, “যেমন করেই হোক বিয়েটা সেরে ফেল। যদি তোমার ভাগ্যে ভালো বউ জোটে, তুমি সুখী। আর যদি খারাপ জোটে, তুমি একজন দার্শনিক হয়ে যাবে”।

একবার বেশ অভাব অনটন যাচ্ছে সক্রেটিসের সংসারে। ঘরে খাবার নেই। বাচ্চারা না খেয়ে আছে। তাই সক্রেটিসকে রেগেমেগে গালমন্দ করতে লাগলেন জ্যানথিপি। সক্রেটিস কিন্তু রাগলেন না। তবে রাগি বউয়ের চেঁচামেচিতে ঘরে টেকাও মুশকিল। কী আর করবেন! চুপচাপ ঘরের বাইরের দিকে চৌকাঠে গিয়ে বসলেন সক্রেটিস। এসব দেখে রাগে আগুন জ্যানথিপি দিলেন এক বালতি পানি স্বামীর মাথার ওপর ঢেলে। পথ চলতি পথিকেরা সে দৃশ্য দেখে হো-হো হেসে উঠলো।

এবার তাদের সঙ্গে সক্রেটিসও হাসতে শুরু করলেন। লোকজন অবাক হল এবার। হাসতে হাসতেই সক্রেটিস দিলেন সেই দাঁতভাঙ্গা জবাব। বললেন, “অবাক হচ্ছেন কেন? এত বজ্রপাতের পর বৃষ্টি তো হবেই”।

Leave a Comment