ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে ৮ জনের মৃত্যু

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে ৮ জনের মৃত্যু। ফেনীতে ২৪ ঘন্টায় ৮২ জনের করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২০০ জন। গত ২৪ ঘন্টায় পরিক্ষার তুলনায় করোনা শনাক্তের ৪২ দশমিক ০৮ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজন পজেটিভ রোগী রয়েছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ মলিকুলার ল্যাবে ফেনী জেলার ২৪৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।এতে নতুন করে করোনা আক্রান্ত রোগী ৮২ জন। নতুন আক্রান্ত ৮২ জনের মধ্যে ফেনী সদরে ৪৯ জন, ছাগলনাইয়ায় ১৩ জন, ফুলগাজীতে ১০ জন, পরশুরামে ৬ জন ও দাগনভূঞায় ৪ জন রয়েছে।

জেলায় শনাক্তকৃত ৫ হাজার ২০০ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে ফেনী সদরে ২ হাজার ৪৮০ জন। শনাক্তের দিকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দাগনভূঞা উপজেলা। এ উপজেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৭৬৯ জন। এরপরে ছাগলনাইয়া উপজেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৭৩৮ জন। সোনাগাজী উপজেলায় শনাক্ত হয়েছে ৫১৭ জন, পরশুরামে শনাক্ত হয়েছে ৩৫৭ জন। সর্বনিম্ন শনাক্ত হয়েছে ফুলগাজীতে ২৯৮ জন। এছাড়া ফেনীর বাইরের রোগী রয়েছেন ৪১ জন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত বছরের ১৬ এপ্রিল ফেনীতে প্রথম এক যুবকের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রামন শনাক্ত হয়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৫ হাজার ৯৯৯টি নমুনা সংগ্রহ করে ফেনীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের জেনেক্সপার্ট ল্যাব, নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাব, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাব থেকে ২৫ হাজার ৯০১টি নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। পরীক্ষার অনুপাতে গড় শনাক্তের হার ১৯.৭৫ শতাংশ।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজী জানান, জেলায় শনাক্তের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফেনী জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে তিন গুণের বেশি। হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৩০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছেন ১০২ রোগী, যাদের মধ্যে ৩৭ জন করোনা পজিটিভ। এদের মধ্যে ৮৩ জনকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। আর আইসিইউতে রয়েছেন ১০ জন।

সিভিল সার্জন ডা. রফিক উস সালেহীন জানান, শুক্রবার পর্যন্ত ফেনীতে মোট ৪ হাজার ৫৩ জন সুস্থ হয়েছেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জেলায় কর্মরত সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেনসহ এ পর্যন্ত ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার ১ দশমিক ৬১।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কোভিড পজিটিভ হয়ে বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭৩ জন রোগী। এদের মধ্যে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ৩৪ জন, দাগনভূইয়ায় ১৪ জন, ছাগলনাইয়ায় ১৩ জন, পরশুরামে ৭ জন, সোনাগাজী ৩ এবং বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছেন ২ জন রোগী।

ফেনীতে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৯৬৭ জন, যাদের মধ্যে ৮৯৪ জন কোভিড আক্রান্ত রোগী স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শে নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফেনীতে এ পর্যন্ত টেলিমেডিসিন সেবা নিয়েছেন ৬৬ হাজার ৬৩২ জন।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র আরও জানায়, জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে যে ৮০ জন রোগী মারা গেছে তার মধ্যে ফেনী সদরে সর্বোচ্চ ৩৫ জন, সোনাগাজীতে ১৫ জন, দাগনভূইয়ায় ১৩ জন, ছাগলনাইয়ায় ১০ জন, পরশুরামে ৪ জন এবং ফুলগাজীতে ৩ জন রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, গণমাধ্যমকর্মী, জনপ্রতিনিধি, সরকারী কর্মকর্তা, ব্যাংকার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গৃহিনী ও শিশু রয়েছে। ফেনীতে আক্রান্ত অনেক রোগী উন্নত চিকিৎসা নিতে যেয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে মারা গেলেও বেশিরভাগ মৃতব্যক্তিদের সংখ্যা জেলার স্বাস্থ্য বিভাগে তালিকায় যোগ হয়নি।

প্রসঙ্গত, ফেনীতে কোভিড-১৯ শনাক্ত’র সংখ্যা ৫শ ছাড়াতে সময় লাগে ৭৬ দিন। পরের ৫শ ব্যক্তি সংক্রমিত হতে সময় লাগে ২৬ দিন। আর পরবর্তী ৫শ ব্যক্তি সংক্রমিত হতে লাগে ৩৫ দিন সময়। চার মাসের মাথায় সংক্রমিতের সংখ্যা ১ হাজার ৫শ অতিক্রম করে।

সাত মাসের মাথায় সংক্রমিতের সংখ্যা ২ হাজার ও সাড়ে ১১ মাসের মাথায় সংক্রামিতের সংখ্যা ২ হাজার ৫শ অতিক্রম করে। পরবর্তী ৫শ শনাক্ত হয়ে মাত্র ১৫ দিন সময় লেগেছে। পরবর্তী ৫শ শনাক্ত হতে সময় লেগেছে ২৮ দিন।

কোভিড-১৯ শনাক্ত’র ১৪ মাসের মাথায় সংক্রামিতের সংখ্যা ৪ হাজার অতিক্রম করেছে। সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার হতে (৫শ’) শনাক্ত হতে সময় লেগেছে ৪০ দিন। চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার শনাক্ত হতে সময় লেগেছে ১৩ দিন। শেষ ৫শ শনাক্ত হতে সময় লেগেছে মাত্র ১৩ দিন। কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার ১৫ মাস পূর্বেই সংক্রামিতের সংখ্যা ৫ হাজার অতিক্রম করেছে।

Leave a Comment