প্রেমিককে সাথে নিয়ে স্বামীকে হত্যার পর নিজ ঘরের মাটিতে পুঁতে রেখেছিল স্ত্রী মনোয়ারা- এমন সন্দেহ করছে স্থানীয়রা। অবশেষে দুইদিন পর ঘরের মাটি খুঁড়ে স্বামী নুর উদ্দিনের (৪০) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের শ্রমিক নেতা মছিউদৌলার বাড়ির লাল মিয়ার ভাড়া বাসায়।
পুলিশ শনিবার রাত ৯ টার দিকে মাটি খুঁড়ে লাশটি উদ্ধার করে পোষ্টমোর্টেমের জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় খুনি রুমেনকে আটক করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত নুর উদ্দিনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে থানায় নিয়ে পরদিন ছেড়ে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার রাত ১ টার দিকে সহযোগি নুর উদ্দিন (৪৫) কে ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পাশের রুমে গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ফেলে স্ত্রী মনোয়ারা ও রুমেন মিয়া (৩০) নামের এক যুবক।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নিহত নুর উদ্দিন ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছিলেন। গত এক বছর আগে রুমেন নামের এক যুবককে তার ঘরে এনে আশ্রয় দেয়। রুমেন পেশায় একজন ব্যাটারী চালিত রিক্সা চালক। নুর উদ্দিন তার স্ত্রীকে সৎ ভাই হিসেবে পরিচয় করে দেয়। রুমেন প্রায় এক বছর ধরে নুর উদ্দিনের ঘরে থেকে রিক্সা চালাতো।
নিহত নুর উদ্দিনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জানান, রুমেনের কাছে খাওয়ার টাকা চাওয়ায় দুইজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এই কারণে বৃহস্পতিবার রাতে রুমেন মিয়া আমার স্বামীকে ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যা করে। রাত ১ টার দিকে পাশের রুম থেকে শব্দ আসায় আমি গিয়ে দেখি আমার স্বামীকে ঘুমের মধ্যে ধারালো ছুরি দিয়ে খুন করছে। ঐ সময়ে আমি রুমেনের দুই পা জড়িয়ে ধরে প্রাণ ভিক্ষা চাই। এসময় সে আমাকে এবং আমার দুই ছেলে মেয়েকেও খুন করবে বলে হুমকি দেয় এবং বলে যে মুখ না খোলার জন্য। যদি ঘটনাটি কাউকে বলি তাহলে আমাদেরকেও খুন করবে। রাতে সে পাশের আরেকটা মুরগী রাখার ঘরে গর্ত করে মাটিতে লাশ পুঁতে ফেলে। এরপর সে শুক্রবার ও শনিবার সারাদিন স্বাভাবিকভাবে রিক্সা চালাই। আমি বিষয়টি আর সহ্য করতে না পেরে শনিবার রাতে আমি আমাদের ভাড়া ঘরের জমিদারকে জানিয়ে দিই।
এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ জানান, গ্রামের নারীদের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে কানাঘুষা চলছিল। স্থানীয় মেম্বার মোস্তাকিম আরজু বিষয়টি নিয়ে খোঁজ করলে নুর উদ্দিন নামের একজনের নিখোঁজ হওয়ার খবর পায়।
এতে স্ত্রী ও তার পরকীয়া প্রেমিক রুমেন মিয়া জড়িত বলেও জানতে পারেন তিনি।
তখন মেম্বার মনোয়ারা বেগমের কাছে নুর উদ্দিন কোথায় জানতে চাইলে প্রথমে জানেন না বলে জানান। পরবর্তীতে অনেক চেষ্টা ও কৌশলে জিজ্ঞাসা করলে হত্যা ও লাশ পুঁতে ফেলার কথা স্বীকার করেন মনোয়ারা।
এদিকে নিহত নুর উদ্দিনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম পরকীয়ার কথা অস্বীকার করলেও স্থানীয় এলাকাবাসীরা মনে করছেন চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার সাথে নুর উদ্দিনের স্ত্রীও জড়িত। রুমেনের একার পক্ষে একটা মানুষকে খুন করে আবার নিজ ঘরে মাটিচাপা দেওয়া সম্ভব নয়।
এব্যাপারে নিহতের আত্নীয় মাহফুজা খাতুন বলেন, রুমেন মিয়ার সাথে মনোয়ারা বেগমের পরকিয়া সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি নিহত নুর উদ্দিন প্রায় সময় আমাকে ফোন করে বলতো। কিন্তু ভয়ে সে কাউকে বলতে পারতোনা। পরকীয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় ঝাগড়া হতো।
নিহত নুর উদ্দিনের বাড়ি নোয়াখালী হলেও সে ফৌজদার হাট এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া বাসায় থাকতো। তার স্ত্রী মনোয়ারার বাবার বাড়ি উপজেলার বাড়বকুণ্ডে।
অপরদিকে খুনি রুমেন মিয়া হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার পাইকপাড়া গ্রামের রমজান আলীর পুত্র বলে জানা যায়।
এব্যাপারে সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সুমন বণিক জানান, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, রুমেন মিয়া একার পক্ষে নুর উদ্দিনকে মেরে মাটি চাপা দেওয়া সম্ভব না।
হত্যায় নিহতের স্ত্রী জড়িত থাকতে পারে বলে তিনি ধারণা করেন। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান ওসি সুমন।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি ধারালো ছুরি এবং মাটি খোড়ার বেলচা উদ্ধার করে।
শনিবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সহকারী পুলিশ সুপার(সীতাকুণ্ড সার্কেল) শম্পা রানী শাহা, মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা এবং ওসি (তদন্ত) সুমন বনিক।
source: Cplusbd.net