বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমলে সমন্বয় করবে সরকার: তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন বিশ্ববাজার যখন স্থিতিশীল হবে তখন নিশ্চয় সরকার জ্বালানির দাম সমন্বয় করবে । সোমবার (৮ আগস্ট) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শহীদ শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি এসব কথা বলেন।

আমাদের অর্থনীতিতে এত ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব নয় বলে তিনি জানান, গত তিন মাসে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে, যা প্রতিদিন ১০০ ডলার করে। এখন সরকার দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। বিশ্ববাজারে দাম কমে আসলে তার প্রভাব আমাদের দেশে পড়তে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে তখন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইউরোপের সবচাইতে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হচ্ছে জার্মানি । সেখানে জ্বালানি সংকটের জন্য সাশ্রয়ী উদ্যোগ নিয়েছে। বিদ্যুতে রেশনিং করা হচ্ছে। জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য নানা বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে ফ্রান্সেও। ৭৫০ ইউরো জরিমানা ঘোষণা করেছে বিধিনিষেধের ব্যত্যয় ঘটলে।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ঘোষণা দিয়েছে ‘গ্রিস ও ইতালিও। এনার্জি ইমারজেন্সি ঘোষণা করা হয়েছে হাঙ্গেরিতে। বার্তা দিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য বলা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিককে। আমাদের সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে বিশ্বজুড়ে এই সংকটের প্রেক্ষাপটে। আমি জনগণের কাছে অনুরোধ জানাবো বিশ্ব বাজারে যখন তেলের মূল্য কমে আসবে সেটি যখন বাংলাদেশের বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করবে তখন জ্বালানি তেলের মূল্য তখন আবার সমন্বয় করা হবে।’

তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে অনেক রাজনৈতিক দল মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে, আমি জানি। তাদের আমি বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে তাকাতে অনুরোধ জানাবো। গত বছর ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। এ বছরও কি ৫৩ হাজার কোটি টাকা বা বিপিসির পক্ষে প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব? কোনো দেশের পক্ষেই সেটি সম্ভব নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপের অনেক শক্তিশালী দেশ ও জাপানও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী নীতি নিয়ে চলছে সেটি সম্ভব নয় বিধায়। বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো হয়েছে সংকটময় পরিস্থিতির জন্যই। তবে বিশ্ববাজারে দাম কমে আসলে তার প্রভাব আমাদের দেশে পড়তে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। তখন আমাদের দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে।

একলাফে একদিনে এত টাকা বাড়ানো হলো এটা মানুষের জন্য বোঝা কি-না ও ইউরোপ আমেরিকার মতো দেশের সঙ্গে তুলনা করা কতটা যৌক্তিক এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য আপনাদের সামনে ডাটা তুলে ধরেছি। আর আমাদের পরিস্থিতি আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে তুলনীয়। ভারতের অর্থনীতি আমাদের থেকে অনেক বেশি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে। যদিও মাথাপিছু আয়ে তাদের আমরা ছাড়িয়ে গেছি। ভারতে জ্বালানি তেলের যে মূল্য আমাদের দেশেও একই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নেপালসহ অন্যান্য দেশে মূল্য কিন্তু আরও অনেক বেশি।

এছাড়া আরও আগেই বাড়ানো উচিৎ ছিল তেলের দাম। তাহলে আমাদের এত ভর্তুকি দিতে হতো না। হঠাৎ করে বাড়ানোর প্রেক্ষিতে মানুষ একটু হতচকিত হয়ে গেছে। এটা আমি জানি বা বুঝি। তবে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে মূল্য সমন্বয় না করে উপায় ছিলো না।

বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে দাম বেড়ে যায়, আর দাম কমলে সেটা দুই মাস পরে প্রভাব পড়ে এটা কি আপনার কাছে মনে হয় না ব্যালেন্সে বৈষম্য হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, এটা একটা বাস্তবসম্মত পদ্ধতি। যখন বিশ্ব বাজারে দাম কমে তখন এর প্রভাব পড়তে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। এজন্য যে দাম কমলে আজকেই বাংলাদেশে চলে আসে না। আসতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই মাস। আর এটা ঠিক নয় বিশ্ব বাজারে দাম বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দেশে দাম বাড়ে।

‘যখন ১৭০ ডলারে উঠেছে তখন আমরা দাম বাড়াইনি। যখন দেখতে পারছি যে কোনোভাবে এত ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব না আমাদের অর্থনীতিতে, প্রতিদিন ১০০ ডলার করে গত তিন মাসে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। তখন সরকার দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। যখন বিশ্ব বাজারে দাম কমলে দেশের বাজারে সমন্বয় করা হবে বলে তিনি জানান।

দেড় দুই মাস পরে কি দাম কমবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, বিশ্ব বাজারে কখন বাড়ে, গত এক বছরের চিত্র যদি দেখেন- একবার কমে আবার বাড়ে। এ রকম একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে। কোভিডের পর ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ জন্য দাম উঠা-নামা করছে। বিশ্ব বাজার যখন স্থিতিশীল হবে ও দাম কসবে তখন নিশ্চয় সরকার মূল্য সমন্বয় করবে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সরকার পরিবহন ভাড়াও নির্ধারণ করে দিয়েছে তারপরও বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে সব পণ্যের দাম বেড়েছে যা ঠিকমতো মনিটরিং হচ্ছে এটার দায়িত্ব কে নেবে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে তার থেকে যদি কেউ ভাড়া বেশি নেয়। সেটা অন্যায়। সরকার নিশ্চয়ই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এটির প্রভাব অন্যান্য পণ্যের ওপর এখনই পড়ার কোনো কারণ নেই।

Leave a Comment